প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের দাবি
পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ফের প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের দাবি জানিয়েছেন। পুলিশ বাহিনীকে সেবামুখী করতে এবং পুরোপুরি সঠিক ধারায় ফেরাতে এ কমিশন প্রয়োজন বলে জানান তারা। কর্মকর্তারা আশঙ্কা করেন, পরিচালনাকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে স্বাধীন অথবা স্বশাসিত কমিশন এই সময়ে গঠন করতে না পারলে পুলিশ তার পুরোনো নেতিবাচক চরিত্রে ফিরে যাবে।
সোমবার (১৮ মার্চ) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠকে পুলিশ বাহিনী পরিচালনায় বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, দাবি ও আশঙ্কার কথা তুলে ধরেন পুলিশ কর্মকর্তারা। রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া পুলিশ কর্মকর্তার সংবাদ মাধ্যমকে এসব তথ্য জানান।
বৈঠকে জেলা পুলিশ সুপার (এসপি), রেঞ্জ ডিআইজি (উপমহাপরিদর্শক), মহানগর পুলিশ কমিশনার, সব ইউনিটের প্রধান, সব অতিরিক্ত আইজিপি অংশ নেন। ১২৭ জন কর্মকর্তার উপস্থিত থাকার কথা ছিল বৈঠকে। এমআরটি পুলিশের ডিআইজি ছাড়া বাকি সব কর্মকর্তাই সভায় ছিলেন। সভায় পুলিশের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব ও রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) ফারজানা ইসলাম।
বৈঠকে আইজিপি বাহারুল আলম তার বক্তব্যে পুলিশ কমিশন গঠনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। পুলিশ কর্মকর্তারা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, আইজিপি বৈঠকে বলেছেন পুলিশ কমিশন ভারতে আছে, পাকিস্তানে আছে, শ্রীলঙ্কায় আছে। আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে পুলিশকে যেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, সেই জায়গা থেকে বের হওয়ার জন্যই পুলিশ কমিশন দরকার।
পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, আগামী প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখতে পুলিশকে সঠিক ধারায় ফেরানোর এখনই উপযুক্ত সময়। এ সময়ে যদি পুলিশের মৌলিক সংস্কার না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে পুলিশ আবার আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের মতো ফ্যাসিস্টের ভূমিকায় অবতীর্ণ হতে পারে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবিব জানান, এখন ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ। এখনই যদি পুলিশ কমিশন গঠন করা না হয়, তাহলে কোনো দিনই হবে না। পুলিশ কমিশন সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের দাবি। ডিআইজি আরও বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে মানুষ সংস্কারের কথা বলছে। আর পুলিশ বাহিনী নিজেরাই নিজেদের সংস্কারের কথা তুলে ধরছে। কিন্তু পুলিশের সংস্কারের কথা কেউ সেভাবে শুনছে না।
বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, প্রধান উপদেষ্টা বৈঠকে জেলার আইনশৃঙ্খলা নিয়ে একটি মূল্যায়নের কথা বলেছেন। এটি এমন হবে যে জেলা পুলিশের যাঁরা ওই মূল্যায়নে ভালো করবেন তাঁদের পুরস্কৃত করা হবে। ভালো পদে পদায়নের ক্ষেত্রে তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জেলা পুলিশের দক্ষতা মূল্যায়ন করার বিষয়ে তিনি বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে পুলিশের নানা সমস্যার কথা উঠে এসেছে। এর মধ্যে আবাসন, যানবাহন ও কর্মপরিবেশের বিষয়টি বিশেষভাবে প্রাধান্য পেয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এই সমস্যাগুলো বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। নারী পুলিশের সদস্যসংখ্যা বাড়ানো এবং তাঁদের সন্তানদের জন্য ‘ডে–কেয়ার’ চালুর দাবিও জানানো হয় বৈঠকে।
‘পুলিশের আবাসন সমস্যা এবং নারী পুলিশ সদস্যদের সমস্যা ও চ্যালেঞ্জের কথা প্রধান উপদেষ্টাকে জানিয়েছি। কনস্টেবল থেকে উপপরিদর্শক (এসআই) পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের আবাসন–সংকটের কথা বিশেষভাবে বলা হয়েছে। দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য বিশেষ করে নারী ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের জন্য বিশুদ্ধ পানি এবং শৌচাগার সমস্যার সমাধানের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেছি,’ রাজশাহীর পুলিশ সুপার (এসপি) ফারজানা ইসলাম।
