বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ ৫ জনকে হত্যা
বিএনপি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ ৫ জনকে হত্যা
বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে মাদারীপুরে শনিবার (৮ মার্চ) দ্বন্দ্বের জেরে এক
স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ তিন ভাইকে কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। এ সময়
হামলাকারীরা পাঁচটি বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়। একই দিনে
চুয়াডাঙ্গায় গতকাল শনিবার বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে এক নেতা নিহত হয়েছেন।
আর
রাজধানী ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় গত শুক্রবার রাতে সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্ব ও এলাকায়
আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একজনকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও সাত
জেলায় চারজনকে হত্যা ও তিন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় চারজনকে আটক
করেছে পুলিশ।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ বাজারে সকাল ১১টার দিকে সংঘর্ষের
ঘটনাটি ঘটে। নিহত রফিকুল ইসলাম (৪৫) তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক
ছিলেন। তিনি তিতুদহ গ্রামের আব্দুর রহিম মল্লিকের ছেলে। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন
রফিকুলের ভাই শফিকুল। দর্শনা থানার উপপরিদর্শক অনুজ কুমার সরকার জানান, ভিজিএফের
কার্ড বিতরণকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েক দিন ধরে তিতুদহ গ্রামের বিএনপির দুই গ্রুপের
মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
এ নিয়ে গতকাল সকালে তিতুদহ বাজারে ওই দুই গ্রুপের
মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় রফিকুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে
পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সংঘর্ষের সময় ভয়ে
বাজারটির সব দোকান বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। সংঘর্ষের ঘটনায় রাতেও এলাকায় থমথমে
অবস্থা বিরাজ করছিল। দর্শনা থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন জোয়ার্দার
জানান, নিহত রফিকুল তিতুদহ ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক।
স্বেচ্ছাসেবক
লীগ নেতাসহ তিন ভাইকে হত্যা: মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের খোয়াজপুর
এলাকায় সকাল ১১টার দিকে ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ১০ জন। নিহতরা হলো
খোয়াজপুরের আজিবর সরদারের ছেলে সাইফুল সরদার (৪০) ও আতাউর সরদার (৩৫) এবং তাঁদের
চাচাতো ভাই মুজাম সরদারের ছেলে পলাশ সরদার (১৭)। সাইফুল খোয়াজপুর ইউনিয়ন
স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময়
তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এলাকায় উত্তেজনা থাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
পুলিশ, স্থানীয় ও নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে খোয়াজপুরে
কীর্তিনাশা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন সাইফুল সরদার। একই এলাকায়
একই বংশের হোসেন সরদারও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন। এ নিয়ে উভয় পক্ষের
মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছিল। এক পক্ষ অন্য পক্ষকে বালু উত্তোলনে বাধা দিত। এর জের ধরে
গতকাল সকাল ১১টার দিকে খোয়াজপুর সরদারবাড়ি জামে মসজিদের সামনে সাইফুল সরদারকে একা
পেয়ে তাঁর ওপর হামলা চালায় হোসেনের লোকজন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সাইফুলের বড় ভাই আতাউর
সরদার, আরেক ভাই অলিল সরদারসহ পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসে। এ সময় প্রাণ
রক্ষায় তিন ভাই দৌড়ে মসজিদের মধ্যে লুকান। পরে সেখান থেকে তাঁদের টেনেহিঁচড়ে ও
কোপাতে কোপাতে বাইরে নিয়ে আসে হামলাকারীরা। সেখানেও তাঁদের কোপানো হয়। এতে
ঘটনাস্থলেই সাইফুল ও আতাউর মারা যান। তাঁদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে গুরুতর
অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর সেও মারা যায়।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক মো. মাসুদ বলেন, পলাশের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য
হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। হামলায় নিহতদের ভাই অলিল সরদার (২৮) ও আজিজুল হকের ছেলে
তাজেল সরদার (২৫) গুরুতর আহত হন।
তাঁদের প্রথমে মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল
ও পরে ঢামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ছাড়া আহতরা হলেন নিহত সাইফুলের স্ত্রী সতি বেগম
(২৫), নিহত আতাউরের স্ত্রী মাহমুদা বেগম (৩০) ও রোজিনা বেগম (৩৫)। তাঁদের কেউ
মাদারীপুর ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে ভর্তি আছেন এবং কেউ প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
নিহতদের মা সুফিয়া বেগম বলেন, ‘হোসেন সরদার ও খোয়াজপুরের শাজাহান খাঁর লোকজন আমার
দুই ছেলেকে হত্যা করেছে। আরেক ছেলের অবস্থাও গুরুতর। হত্যার বিচার চাই। এ সময় তারা
আমাদের পাঁচটি বসতঘর ভাঙচুর ও লাটপাট করে আগুন ধরিয়ে দেয়।’
